ঢাকা ০৯:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ:
চলতি সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম না কমলে আমদানির সিদ্ধান্ত: বাণিজ্য উপদেষ্টা শিক্ষকদের দাবি যৌক্তিক, ২০% বাড়িভাড়া বৃদ্ধির সামর্থ্য অর্থনীতিতে ফেরেনি: প্রধান উপদেষ্টা বিশ্ব নেতাদের উপস্থিতিতে মিশরে গাজা শান্তিচুক্তি সই চীনের তৈরি যুদ্ধবিমান কিনছে বাংলাদেশ । চালু হলো বিনিয়োগকারীদের জন্য একক ডিজিটাল গেটওয়ে ‘বাংলা বিজ’ জুলাই-আগস্টে রাজস্ব আদায়ে ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি: এনবিআর ডেঙ্গুতে একদিনে ১২ জনের মৃত্যু নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে সমঝোতায় আসতেই হবে: প্রধান উপদেষ্টা ডাকসু নির্বাচনপরাজিত হলেও নির্বাচনী ইশতেহার পূরণের অঙ্গীকার আবিদের ঘুরে দাঁড়িয়েছে শেয়ারবাজার, বেড়েছে সূচক-লেনদেন

কৃষকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতে খানির ৭ সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা: কৃষির দেশে কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ট্র্যাজেডি নয়, বরং এটি লজ্জাজনক বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি)।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২৬ মার্চ মেহেরপুরের মুজিবনগরের কৃষক সাইফুল শেখ পেঁয়াজ চাষে ক্ষতির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন। তার মৃত্যু এবং দেশের কৃষকদের দুরবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে একটি তথ্যানুসন্ধান পরিচালনা করেছে খানি।

কৃষি নির্ভরশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও দেশে সবচেয়ে অবহেলিত গোষ্ঠী আমাদের কৃষক। পৃথিবীর কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে কৃষকের জন্য বিভিন্ন সেইফ গার্ডিং বা সুরক্ষা স্কিম থাকলেও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। চাষাবাদের প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চমূল্যে বীজ, সার, শ্রমিকের মজুরি, সেচ, কীটনাশক, ফসল তোলা এবং বিক্রির প্রতিটি পর্যায়ে প্রাকৃতিক নানা বৈরিতা, দুর্যোগ পেরিয়ে এসে ফড়িয়াবাজি আর ফসলের দাম নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ভুগতে হয় তাদের। উৎপাদন যত ভালোই হোক না কেন, ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেলে কৃষকের জন্য তা সোনার ফসল হয় না, বরং গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এ বছর কৃষকের হাতে পেঁয়াজ শেষ হবার পরেই, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এর গুদামজাতের দৌরাত্ম্যে ভরা মৌসুমেও এই দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ৩০-৩৫ টাকার পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।

গত ২৬ মার্চ মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার ভবরপাড়া গ্রামে ৫৫ বছর বয়সী কৃষক সাইফুল শেখ পেঁয়াজ চাষে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়ে ঋণ পরিশোধের চাপে আত্মহত্যা করেছেন। দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষে তার দেড় লাখ টাকা খরচ হলেও পেঁয়াজ বিক্রিতে পাওয়া গেছে ৫৮ হাজার টাকা। এর ঠিক ১৮ দিন পর ১৪ এপ্রিল রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মাঝপাড়া বাউসা গ্রামের আরেক এক কৃষক মীর রুহুল আমিন পেঁয়াজ চাষের লোকসান এবং ঋণ এর ভারে ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।

কৃষকরা জানিয়েছেন, মার্চের শেষের দিকে পেঁয়াজের মূল্য চাষের খরচ মেটানোর জন্যও যথেষ্ট ছিল না। প্রতি বিঘায় খরচ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা হলেও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ এবং হাইব্রিড সুখসাগর পেঁয়াজ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ। গড়ে বিঘাপ্রতি উৎপাদন ২০ থেকে ৩০ মণ হওয়ায় বিক্রির পর খরচ উঠে আসেনি। অথচ সাইফুল শেখের মৃত্যুর দু’সপ্তাহের মাথায় বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কৃষির দেশে কৃষকের আত্মহত্যার হৃদয়বিদারক ঘটনাটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ট্র্যাজেডি নয়, বরং এটি লজ্জাজনক।

কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা প্রতিরোধে কৃষকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা, দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খানির সুপারিশগুলো হলো:

১. প্রাকৃতিক বা যে কোনো দুর্যোগে ফসলহানির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সুরক্ষার জন্য শস্য বিমা চালু করতে হবে।

২. প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বীজ সার কীটনাশক সংক্রান্ত ফসলহানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণের সুদ মওকুফ, এককালীন সাহায্যের তহবিল গঠন এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৩. ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য সরকার প্রদত্ত কৃষি ভর্তুকি সরাসরি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৪. কৃষকের জন্য মৌসুমভিত্তিক কৃষি ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বল্পমূল্যে ও সহজ কিস্তিতে প্রকৃত কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ এবং কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান ও এর আওতা বৃদ্ধি করতে হবে।

৫. কৃষি পণ্য উৎপাদনের পূর্বাভাস, লক্ষ্যমাত্রা, বাজারজাতকরণের ধরণ, কোন মৌসুমে কোন ফসল কী পরিমাণে উৎপাদন করলে কৃষক লাভবান হবেন সেই বিষয়ে কৃষককে আগাম অবহিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. আত্মহত্যাকারী কৃষক পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা রাষ্ট্রের পক্ষ হতে করতে হবে।

৭. কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি এবং বাজার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আত্মহত্যার শিকার কৃষক সাইফুল শেখের মেয়ে রোজেফা খাতুন ও স্ত্রী রমেসা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোসাইদা সুলতানা, বাংলাদেশ সেফ অ্যাগ্রো ফুড এফোর্টের সভাপতি, ড. জয়নাল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিকি, সাংবাদিক অমিত রঞ্জন দে প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন
ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

কৃষকের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিতে খানির ৭ সুপারিশ

আপডেট সময় ০৯:১১:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫

ঢাকা: কৃষির দেশে কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ট্র্যাজেডি নয়, বরং এটি লজ্জাজনক বলে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক (খানি)।

বুধবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা তুলে ধরা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২৬ মার্চ মেহেরপুরের মুজিবনগরের কৃষক সাইফুল শেখ পেঁয়াজ চাষে ক্ষতির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন। তার মৃত্যু এবং দেশের কৃষকদের দুরবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে একটি তথ্যানুসন্ধান পরিচালনা করেছে খানি।

কৃষি নির্ভরশীল দেশ হওয়া সত্ত্বেও দেশে সবচেয়ে অবহেলিত গোষ্ঠী আমাদের কৃষক। পৃথিবীর কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে কৃষকের জন্য বিভিন্ন সেইফ গার্ডিং বা সুরক্ষা স্কিম থাকলেও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো কর্মসূচি নেই। চাষাবাদের প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চমূল্যে বীজ, সার, শ্রমিকের মজুরি, সেচ, কীটনাশক, ফসল তোলা এবং বিক্রির প্রতিটি পর্যায়ে প্রাকৃতিক নানা বৈরিতা, দুর্যোগ পেরিয়ে এসে ফড়িয়াবাজি আর ফসলের দাম নিয়ে সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ভুগতে হয় তাদের। উৎপাদন যত ভালোই হোক না কেন, ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেলে কৃষকের জন্য তা সোনার ফসল হয় না, বরং গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এ বছর কৃষকের হাতে পেঁয়াজ শেষ হবার পরেই, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এর গুদামজাতের দৌরাত্ম্যে ভরা মৌসুমেও এই দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ৩০-৩৫ টাকার পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।

গত ২৬ মার্চ মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার ভবরপাড়া গ্রামে ৫৫ বছর বয়সী কৃষক সাইফুল শেখ পেঁয়াজ চাষে আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়ে ঋণ পরিশোধের চাপে আত্মহত্যা করেছেন। দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষে তার দেড় লাখ টাকা খরচ হলেও পেঁয়াজ বিক্রিতে পাওয়া গেছে ৫৮ হাজার টাকা। এর ঠিক ১৮ দিন পর ১৪ এপ্রিল রাজশাহীর বাঘা উপজেলার মাঝপাড়া বাউসা গ্রামের আরেক এক কৃষক মীর রুহুল আমিন পেঁয়াজ চাষের লোকসান এবং ঋণ এর ভারে ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন।

কৃষকরা জানিয়েছেন, মার্চের শেষের দিকে পেঁয়াজের মূল্য চাষের খরচ মেটানোর জন্যও যথেষ্ট ছিল না। প্রতি বিঘায় খরচ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা হলেও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা মণ এবং হাইব্রিড সুখসাগর পেঁয়াজ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ। গড়ে বিঘাপ্রতি উৎপাদন ২০ থেকে ৩০ মণ হওয়ায় বিক্রির পর খরচ উঠে আসেনি। অথচ সাইফুল শেখের মৃত্যুর দু’সপ্তাহের মাথায় বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। কৃষির দেশে কৃষকের আত্মহত্যার হৃদয়বিদারক ঘটনাটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ট্র্যাজেডি নয়, বরং এটি লজ্জাজনক।

কৃষকের আত্মহত্যার ঘটনা প্রতিরোধে কৃষকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা, দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খানির সুপারিশগুলো হলো:

১. প্রাকৃতিক বা যে কোনো দুর্যোগে ফসলহানির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সুরক্ষার জন্য শস্য বিমা চালু করতে হবে।

২. প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বীজ সার কীটনাশক সংক্রান্ত ফসলহানির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণের সুদ মওকুফ, এককালীন সাহায্যের তহবিল গঠন এবং ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৩. ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য সরকার প্রদত্ত কৃষি ভর্তুকি সরাসরি প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৪. কৃষকের জন্য মৌসুমভিত্তিক কৃষি ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বল্পমূল্যে ও সহজ কিস্তিতে প্রকৃত কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ এবং কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান ও এর আওতা বৃদ্ধি করতে হবে।

৫. কৃষি পণ্য উৎপাদনের পূর্বাভাস, লক্ষ্যমাত্রা, বাজারজাতকরণের ধরণ, কোন মৌসুমে কোন ফসল কী পরিমাণে উৎপাদন করলে কৃষক লাভবান হবেন সেই বিষয়ে কৃষককে আগাম অবহিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।

৬. আত্মহত্যাকারী কৃষক পরিবারকে সব ধরনের সহায়তা রাষ্ট্রের পক্ষ হতে করতে হবে।

৭. কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি এবং বাজার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কর্মশালার আয়োজন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আত্মহত্যার শিকার কৃষক সাইফুল শেখের মেয়ে রোজেফা খাতুন ও স্ত্রী রমেসা বেগম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোসাইদা সুলতানা, বাংলাদেশ সেফ অ্যাগ্রো ফুড এফোর্টের সভাপতি, ড. জয়নাল আবেদীন, সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিকি, সাংবাদিক অমিত রঞ্জন দে প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন