সাগর-রুনি হত্যাকান্ড তদন্তে পিবিআই প্রধানের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন
আলোচিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত কাজ শেষ করতে হাই কোর্টের নির্দেশের ২৩ দিন পর টাস্কফোর্স গঠন করল সরকার।
বুধবার চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক পরিপত্রে বলেছে, “ছয় মাসের মধ্যে টাস্কফোর্স তার প্রতিবেদন হাই কোর্টে দাখিল করবে। টাস্কফোর্স প্রয়োজনে সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।”
পরিপত্রে টাস্কফোর্সে কোনো সদস্যের নাম দেওয়া হয়নি। তবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধানকে টাস্কফোর্সের আহবায়ক করা হয়েছে।
আর পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার নিচে নয় এমন একজন, একই পদবীর অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) একজন এবং র্যাবের পরিচালক পদমর্যাদার একজন প্রতিনিধি রাখার কথা বলা হয়েছে।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, “টাস্কফোর্স যথাযথ আইন ও বিধি অনুসরণপূর্বক সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে আগামী ছয় মাসের মধ্যে হাই কোর্ট বিভাগে প্রতিবেদন দাখিল করবে।”
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া করা বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি।
সাগর সে সময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলী রোমান শেরেবাংলা থানায় মামলা করেন।
ওই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রতিবেদন এক যুগেও দাখিল হয়নি। আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ পিছিয়েছে ১১১ বার।
গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তের দায়িত্ব থেকে র্যাবকে বাদ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে সেদিন উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করে এ তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে ছয় মাস বেঁধে দেয় হাই কোর্ট।
২০১২ সালে সাগর-রুনিকে হত্যার রাতে সেই ফ্ল্যাটে তাদের সঙ্গে ছিল একমাত্র সন্তান পাঁচ বছর বয়সী মাহির সরওয়ার মেঘ। তাকে উদ্ধৃত করে পুলিশ তখন জানিয়েছিল, খুনি ছিল দুজন।
আলোড়ন সৃষ্টি করা ওই হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপর বছরের পর বছর গড়ালেও হত্যা রহস্যের কিনারা হয়নি।
হত্যার পর রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন রুনির ভাই নওশের রোমান। বিভিন্ন সময়ে মোট আটজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। পরে দুজন জামিনও পান।
তারা হলেন- রুনির বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির, রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুন, পলাশ রুদ্র পাল, তানভীর ও আবু সাঈদ।
প্রথমে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্তে নামে। চার দিন পর তদন্তের ভার দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে।
তারা রহস্যের কিনারা করতে না পারায় হাই কোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দায়িত্ব পেয়ে ডিএনএসহ অন্যান্য বায়োমেট্রিক পরীক্ষার জন্য ঘটনাস্থল থেকে বটি, পরিধেয় কাপড়সহ বেশ কিছু বস্তু পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবেও পাঠায় র্যাব। কিন্তু এতদিনেও তার ফল প্রকাশ করা হয়নি।
তদন্ত প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা নিহত সাংবাদিক দম্পতির পরিবার এবং পেশাজীবীদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই মামলার দ্রুত ন্যায়বিচার পাওয়ার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
এর আগে বিভিন্ন সময় সাবেক সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এই হত্যাকাণ্ডের কূলকিনারা করার আশা দিলেও সুফল মেলেনি।
শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার পতন হলে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এই হত্যার বিচারের আশ্বাস দিয়ে বলেন, এই বিচার করা না হলে তারা জাতির কাছে দায়ী থাকবেন।