সাংবাদ সম্মেলনে আব্দুল আওয়াল মিন্টু
তিন মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হবে ন্যাশনাল ব্যাংক
ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা পরিচালক আব্দুল আওয়াল মিন্টু বলেছেন, যারা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করেছি। সেই টাকাগুলো উদ্ধারের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক সহায়তায় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে আমরা এটাচমেন্ট (আদায়ের মাধ্যমে সমন্বয়) শুরু করে দিব। আশা করি আগামী তিন মাসের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলামোটরে ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা ও আগামী পরিকল্পনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা পরিচালক আব্দুল আওয়াল মিন্টু।
দেশের শীর্ষ স্থানীয় এ বাবসায়ী বলেন, ব্যাকিং খাতসহ সামগ্রিক অর্থনীতি চরম মন্দা ও তারল্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যার মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকও রয়েছে। এই ক্ষতির বড় একটি অংশ জুড়ে রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ও গুজব। যার ফলে গ্রাহক এবং আমানতকারীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। আগামী তিনমাসের মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা সহায়তা পেয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এখনো ন্যাশন্যাল ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তায় খুব শীঘ্রই ঘুরে দাঁড়ানোর আশা ব্যক্ত করেন চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, যারা ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে তাদের নামে, বেনামে, স্থাবর, অস্থাবর যেসব সম্পত্তি আছে সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। এমনও গ্রাহকও আছে গুলশানে তাদের ১০০০ কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলো সব নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছি ব্যাংকের পক্ষ থেকে। যারা এই ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা নিয়েছে তাদের আমরা ধরার কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি আরো জানান, এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ন্যাশনাল ব্যাংক প্রায় ৯০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করেছে। আরও ৪০০ কোটি টাকা আদায়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। চলতি বছর ন্যাশনাল ব্যাংকের বৈদেশিক রেমিট্যান্স আহরণে গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৫৫ শতাংশ। বিশেষত, আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আহরণে ন্যাশনাল ব্যাংকের অবস্থান দ্বিতীয়। ন্যাশনাল ব্যাংক প্রথমবারের মতো ১৯৯৭ সালে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান মাস্টার কার্ডকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবসার প্রচলন ঘটায়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কৃষি খাতে ন্যাশনাল ব্যাংকের বিতরণকৃত মোট ঋণ গ্রহীতার সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। দেশের প্রান্তিক কৃষিনির্ভর মানুষের পাশে দাঁড়াতে ব্যাংকটি ‘বরেন্দ্র’ সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করে ব্যাংকটি। যার সুফল দেশের পূর্বাঞ্চলের মানুষ এখনো ভোগ করছেন।
সম্মেলনে বক্তারা আরো জানান, ন্যাশনাল ব্যাংক আশি ও নব্বই দশকে দেশের পোশাক শিল্পের উত্থান এবং রপ্তানীতে এর অবদান অনস্বীকার্য। এছাড়া সেই সময় থেকে ব্যাংকটি বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিকাশে এবং বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে। ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ২২১টি শাখা, ৬৫টি উপশাখা, দেশের ভেতর ২টি ও দেশের বাইরে ৪টি সাবসিডিয়ারি, জিসিসি অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রে ২টি মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনা চুক্তিসহ দেশের নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) এবং রেটিং প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে ব্যাংকটির মোট জনবল প্রায় ৬ হাজার। এতে আমানতকারী ২০ লাখের বেশি এবং ঋণগ্রহীতা প্রায় ১ লাখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান ও উদ্যোক্তা পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন, ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মুখলেসুর রহমান, স্বতন্ত্র পরিচালক ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সাত্তার সরকার, স্বতন্ত্র পরিচালক ড. মেলিতা মেহজাবিন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. তৌহিদুল আলম খান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ হিউম্যান রিসোর্সেস অফিসার।
শেখ আকতার উদ্দিন আহমেদ, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ রিস্ক অফিসার ইমরান আহমেদ, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ ক্রেডিট অফিসার মো. আব্দুল মতিনসহ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, গত ২০ আগস্ট ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়। এতে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন ব্যাবসায়ী ও ন্যাশনাল ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক আবদুল আউয়াল মিন্টু।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খাতা-কলমে খেলাপি হয়ে পড়েছিল ১২ হাজার ৩৬৫ কোটি। বিতরণকৃত মোট ঋণের ২৯ শতাংশ। প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকটির খেলাপিরিন আরও বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ বর্তমানে ১১ হাজার ৬৯৮ কোটি।