ঢাকা ০৬:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশ্বে রাশিয়ার শস্য রপ্তানি ৩ কোটি টন

বাংলাদেশে গম রফতানি করেছে ৩৮ লাখ টন

নিজস্ব প্রতিবেদক
০৫:৩৫:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪


বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্তিতস্কি বলেছেন, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে রাশিয়া বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। রাশিয়ার কৃষিপণ্যের রপ্তানির পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার থেকেও বেশি। ২০২৪ সালের শুরু থেকেই রাশিয়ার শস্য রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। গত অর্থ বছরে রাশিয়া হতে বাংলাদেশে গম রফতানি হয়েছে ৩৮ লাখ টন। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোতে রাশিয়ার রপ্তানির হারও ক্রমবর্ধমান। রাশিয়ার প্রধান রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে মিশর, তুরস্ক, ইরান এবং বাংলাদেশ।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্তিতস্কি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে রাশিয়ার খনিজ সার অপরিহার্য। বৈশ্বিক সার বাজারে রাশিয়ার অবদান প্রায় এক-পঞ্চমাংশ, যা বিশ্বের প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাশিয়ার কৃষি খাতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার পাশাপাশি, আমাদের বিশেষজ্ঞরা খাদ্য সরবরাহের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। আমরা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) সঙ্গে একত্রে অনেক বছর ধরে কাজ করে আসছি ও প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে আসছি এবং এবাবদ আমরা ১২০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দ করেছি। এছাড়াও, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সাথে মিলে মাটি সংরক্ষণ, প্রাণী ও উদ্ভিদ রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী কাজ করছি।

রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্তিতস্কি আরও জানান, সম্প্রতি রাশিয়া ১৬০টিরও বেশি দেশে খাদ্য সরবরাহ বৃদ্ধি করেছে, যার মধ্যে ১০০ মিলিয়ন টন খাদ্য এবং ৪০ মিলিয়ন টন সার রপ্তানি করা হয়েছে। ইউক্রেন সংকটের পরেও রাশিয়ার রপ্তানিতে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি, বরং নতুন ও দীর্ঘমেয়াদী অংশীদার খুঁজে পাওয়ার মাধ্যমে আমাদের রপ্তানি কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হয়েছে। গত পাঁচ বছরে আমরা আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রায় ৩৮০ হাজার টন খাদ্য মানবিক সহায়তা হিসেবে সরবরাহ করেছি। এছাড়াও, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমরা ছয়টি আফ্রিকান দেশে ২০০ হাজার টন গম বিনামূল্যে সরবরাহ করেছি এবং মালাউই, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং নাইজেরিয়ায় ১১০ হাজার টন সার বিতরণ করা হয়েছে।

দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের কিছু সার ইউরোপীয় বন্দরগুলোতে আটকে রাখা হয়েছে, যদিও রাশিয়া সেগুলোকে বিনামূল্যে ক্ষুধার্ত দেশগুলোতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবুও, আমরা সবসময় দায়িত্বশীল আন্তর্জাতিক অংশীদার হিসেবে আমাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রয়েছি।

ইউক্রেন সংঘাত এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, এসব নিষেধাজ্ঞার ফলে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন, মূল্য বৃদ্ধি এবং নতুন দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে, রাশিয়ার কৃষকরা বিকল্প সরবরাহ চেইন ও স্থানীয় মুদ্রায় নিষ্পত্তি ব্যবস্থা গড়ে তোলায় সফল হয়েছে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করছি যে, নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সরাসরি সীমান্ত বন্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেনি। গত কৃষি বছরে (জুলাই ২০২৩ – জুন ২০২৪), রাশিয়া বাংলাদেশে ৩.৮ মিলিয়ন টন গম রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১.৮ গুণ বেশি। বাংলাদেশে রাশিয়ান শস্য সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গুণগত মানের দিক থেকে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করা হয়েছে।

বিশ্বের বৃহত্তম শস্য ও খনিজ সার রপ্তানিকারক হিসেবে, রাশিয়া বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যাগুলো সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো সরবরাহ শৃঙ্খলা ব্যাহত করছে, যার ফলে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে এবং এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর ওপর। এজন্য রাশিয়ান খাদ্য সরবরাহের জন্য একটি নতুন অবকাঠামো প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন, যার মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন এবং বিকল্প পেমেন্ট সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

বিশ্বে রাশিয়ার শস্য রপ্তানি ৩ কোটি টন

বাংলাদেশে গম রফতানি করেছে ৩৮ লাখ টন

আপডেট সময় ০৫:৩৫:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪


বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্তিতস্কি বলেছেন, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ কৃষিপণ্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে রাশিয়া বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। রাশিয়ার কৃষিপণ্যের রপ্তানির পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার থেকেও বেশি। ২০২৪ সালের শুরু থেকেই রাশিয়ার শস্য রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। গত অর্থ বছরে রাশিয়া হতে বাংলাদেশে গম রফতানি হয়েছে ৩৮ লাখ টন। গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোতে রাশিয়ার রপ্তানির হারও ক্রমবর্ধমান। রাশিয়ার প্রধান রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে মিশর, তুরস্ক, ইরান এবং বাংলাদেশ।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্তিতস্কি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে রাশিয়ার খনিজ সার অপরিহার্য। বৈশ্বিক সার বাজারে রাশিয়ার অবদান প্রায় এক-পঞ্চমাংশ, যা বিশ্বের প্রায় ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাশিয়ার কৃষি খাতে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার পাশাপাশি, আমাদের বিশেষজ্ঞরা খাদ্য সরবরাহের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। আমরা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডাব্লিউএফপি) সঙ্গে একত্রে অনেক বছর ধরে কাজ করে আসছি ও প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করে আসছি এবং এবাবদ আমরা ১২০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দ করেছি। এছাড়াও, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সাথে মিলে মাটি সংরক্ষণ, প্রাণী ও উদ্ভিদ রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী কাজ করছি।

রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্তিতস্কি আরও জানান, সম্প্রতি রাশিয়া ১৬০টিরও বেশি দেশে খাদ্য সরবরাহ বৃদ্ধি করেছে, যার মধ্যে ১০০ মিলিয়ন টন খাদ্য এবং ৪০ মিলিয়ন টন সার রপ্তানি করা হয়েছে। ইউক্রেন সংকটের পরেও রাশিয়ার রপ্তানিতে কোনো বিঘ্ন ঘটেনি, বরং নতুন ও দীর্ঘমেয়াদী অংশীদার খুঁজে পাওয়ার মাধ্যমে আমাদের রপ্তানি কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হয়েছে। গত পাঁচ বছরে আমরা আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রায় ৩৮০ হাজার টন খাদ্য মানবিক সহায়তা হিসেবে সরবরাহ করেছি। এছাড়াও, ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমরা ছয়টি আফ্রিকান দেশে ২০০ হাজার টন গম বিনামূল্যে সরবরাহ করেছি এবং মালাউই, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে এবং নাইজেরিয়ায় ১১০ হাজার টন সার বিতরণ করা হয়েছে।

দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের কিছু সার ইউরোপীয় বন্দরগুলোতে আটকে রাখা হয়েছে, যদিও রাশিয়া সেগুলোকে বিনামূল্যে ক্ষুধার্ত দেশগুলোতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবুও, আমরা সবসময় দায়িত্বশীল আন্তর্জাতিক অংশীদার হিসেবে আমাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ রয়েছি।

ইউক্রেন সংঘাত এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, এসব নিষেধাজ্ঞার ফলে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন, মূল্য বৃদ্ধি এবং নতুন দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। তবে, রাশিয়ার কৃষকরা বিকল্প সরবরাহ চেইন ও স্থানীয় মুদ্রায় নিষ্পত্তি ব্যবস্থা গড়ে তোলায় সফল হয়েছে।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্য করছি যে, নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সরাসরি সীমান্ত বন্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেনি। গত কৃষি বছরে (জুলাই ২০২৩ – জুন ২০২৪), রাশিয়া বাংলাদেশে ৩.৮ মিলিয়ন টন গম রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১.৮ গুণ বেশি। বাংলাদেশে রাশিয়ান শস্য সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং গুণগত মানের দিক থেকে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করা হয়েছে।

বিশ্বের বৃহত্তম শস্য ও খনিজ সার রপ্তানিকারক হিসেবে, রাশিয়া বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তার সমস্যাগুলো সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে অবৈধ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো সরবরাহ শৃঙ্খলা ব্যাহত করছে, যার ফলে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে এবং এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ছে গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর ওপর। এজন্য রাশিয়ান খাদ্য সরবরাহের জন্য একটি নতুন অবকাঠামো প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন, যার মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেন এবং বিকল্প পেমেন্ট সিস্টেম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন